সোমবার | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম-১০ আসনে উপনির্বাচনে কে পাবেন মনোনয়ন?

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম অফিস: এমপি পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রামে চার হেভিওয়েট প্রার্থীর নাম আলোচনায় আসছে বারবার। তবে প্রতিবারই অন্য কেউ পাচ্ছেন মনোনয়ন। অথচ ভোটের মাঠে তাঁদের আলাদা কর্মী বাহিনী আছে। আছে ভোট ব্যাংকও। প্রশ্ন নেই তাঁদের যোগ্যতা নিয়েও। তার পরও রাজনৈতিক সমীকরণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন তাঁরা। আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত মিলছে না মনোনয়ন। দলীয় কোন্দলই তাঁদের মনোনয়নের পথে কাঁটা হচ্ছে বারবার। ভোটের মাঠে তাঁরা তাই পরিচিত হচ্ছেন ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হিসেবে।

এ আসনে সম্ভাব্য হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী।

বাণিজ্যিক রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ আসনের একটি চট্টগ্রাম-১০। ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর নিয়ে গঠিত এ আসনে উপনির্বাচন হবে ৩০ জুলাই।

নৌকার টিকিট পেতে এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে দৌড়ঝাঁপ। প্রার্থীরা যে যার মতো করে চেষ্টা করছেন কেন্দ্রের নজর কাড়তে। হেভিওয়েট অনেক প্রার্থী ঢাকায় গিয়ে করছেন তদবির। কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাঁরা বাড়িয়েছেন গণসংযোগ। তাঁদের এসব তৎপরতাকে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে মনে করছেন ভোটাররা।

ডা. আফছারুল আমীনের মৃত্যুবরণে এ আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। তিনি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী। নগর আওয়ামী লীগেরও সহসভাপতি ছিলেন। টানা তিনবার এমপি হয়েছেন তিনি। তাই এই আসনে মনোনয়ন পেলে বিজয় সহজ হবে বলে মনে করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

মাস দুয়েক আগে উপনির্বাচন হয়েছে নগরের আরেকটি আসন বোয়ালখালী-চান্দগাঁওতে। সেই নির্বাচনে নতুন প্রার্থীর ওপরই আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগ। তার নাম নোমান আল মাহমুদ। সেই আসনেও হেভিওয়েট অনেক প্রার্থী ছিলেন। মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন ১৮ জন। কিন্তু আলোচনার বাইরে থাকা নোমানকেই নৌকার টিকিট দিয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। চট্টগ্রাম-১০ আসনেও কি চমক থাকবে, নাকি হেভিওয়েট প্রার্থীদের কেউ নৌকা পাবেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

সাবেক মেয়র নাছির বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। অতীতে নগরীর কোতোয়ালি আসন থেকেও মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। নাছিরের আলাদা কর্মী বাহিনী আছে পুরো চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়ন চাইছেন তিনিও। তবে বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনে মনোনয়ন চেয়েও বঞ্চিত হওয়ায় এবার কৌশলী ভূমিকায় আছেন তিনি। মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সবার খবর রাখেন। তিনি জানেন, এ আসনের জন্য যোগ্য প্রার্থী কে।

মনজুর আলম গত জাতীয় নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আলোচনায় এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি। নিজস্ব ভোট ব্যাংক আছে মনজুর আলমের। সজ্জন হিসেবেও পরিচিত তিনি। কিন্তু বারবার দলবদল করার বদনাম আছে তাঁর। এবার সেই বদনাম ঘুচিয়ে তিনি নতুন স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন কিনা তা দেখার বিষয়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মনোনয়ন চাইব না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে সাড়া দেব।’

চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এতদিন মনোনয়ন চেয়েছেন বন্দর-পতেঙ্গা আসন থেকে। তবে সেখানে বর্তমান এমপি এম এ লতিফের ওপরই বারবার আস্থা রেখেছে দল। তাই ১৫ বছর চেষ্টা করেও এমপি পদে মনোনয়ন পাননি সুজন।
সুজন চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে সাধারণ মানুষের পাশে থাকেন তিনি। এই আসনেই তাঁর জন্মস্থান। তবে বন্দর-পতেঙ্গায় গিয়ে মনোনয়ন চাওয়ায় এলাকার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তাঁর। তিনি বললেন, ‘রাজনীতি করে ৫০ বছর অতিক্রম করেছি। কখনও কিছু চাইনি। এখনও চাই না। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

আলতাফ হোসেন চৌধুরী নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। বন্দর-পতেঙ্গা আসন থেকে সুজনের মতো তিনিও মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন কয়েক দফা। তাই চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে এখন আবার মনোনয়ন চাইছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে নির্বাচন করব। অন্যথায় মনোনয়ন চাইব না।’

এ উপনির্বাচনে আরও আলোচনায় আছেন নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ কে এম বেলায়েত হোসেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) ইমদাদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সৈয়দ মাহমুদুল হক, নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এরশাদুল আমিন, প্রয়াত এমপি ডা. আফছারুল আমীনের সন্তান ফয়সাল আমীন, প্রয়াত এম এ আজিজের ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ।

© 2022 payranews.com
Developed by- Payra Team